আজাদ মনসুর:
জেলার সাংবাদিকতায় নতুনমাত্রা সৃষ্টিকারী পুরোধা হিসেবে যার নাম জেলা জুড়ে আলোকিত তিনি সাংবাদিক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম। মগনামার সাবেক চেয়ারম্যান ও সর্বজন সমাদৃত এই মানুষটি ১৯৩৮ সালে চকরিয়া মগনামা (বর্তমান পেকুয়া উপজেলা) জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা- হাজী আশরাফ মিয়া। মাতা- খুইল্লা বিবি।

শিক্ষা জীবনে তিনি ১৯৫৩ সালে কুতুবদিয়া বড়ঘোপ হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৬ সালে সাতকানিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম নৈশ কলেজ (সিটি কলেজ) থেকে বিএ পাস করেন।

কর্মজীবনে তিনি স্নাতক ছাত্র থাকাকালে ১৯৬১ সালে দৈনিক আজাদীর চট্টগ্রাম অফিসে স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে সাংবাদিকতার সূচনা করেন। ১৯৭২ সালে বাংলার বাণী’র জেলা প্রতিনিধি, ১৯৭৩-৭৪ সালে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এনা’র জেলা প্রতিনিধি। ১৯৭৮ সালে সাপ্তাহিক কক্সবাজার, ১৯৮০ সালে সাপ্তাহিক স্বদেশবাণী এবং ১৯৯১ সাল থেকে কক্সবাজার নিয়মিত দৈনিক কক্সবাজার প্রকাশ করে আসছেন। ১৯৭৪ সালে সাময়িকী প্রিয়তমা প্রকাশ করেন।

১৯৭৫ সালে কক্সবাজার প্রেসক্লাব গঠন ও ক্লাবের আহবায়ক মনোনীত। ১৯৭৬ থেকে পরপর আট দফা প্রেসক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত। প্রকাশিত পুস্তক: ৬ দফা কি ও কেন (১৯৬৬), ইসলামের দৃষ্টিতে ৬ দফা (১৯৬৬)।

কক্সবাজার মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা ১৯৯৭ ও কক্সবাজার প্রেসক্লাব সংবর্ধনা (২০০০) লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদ কক্সবাজার জেলা আহবায়ক, সভাপতি- মানবাধিকার কমিশন কক্সবাজার জেলা, সহ-সভাপতি- জেলা আওয়ামী লীগ, সহ-সভাপতি- বায়তুশ শরফ হাসপাতাল, কক্সবাজার। আজীবন সদস্য- ঢাকা-চট্টগ্রাম সমিতি, ডায়াবেটিক্্স হাসপাতাল, কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরী। কক্সবাজারে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।

পাকিস্তান বিরোধী প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন ও ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র হিসাবে নূরুল আমিনের জনসভা বানচাল-প্রচেষ্টার অভিযোগে চট্টগ্রামের লালদীঘির প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে অন্যান্যদের সাথে আটক ও ৪ ঘন্টা পর মুক্তি লাভ করেন।

১৯৬৩ সাল এনডিএফ-এর কক্সবাজার জেলা আহবায়ক, ১৯৬৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯এর অভ্যূত্থান ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ কৃষকলীগ-এর জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য। ১৯৭৪ সালে বাকশালে যোগদান ও কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরোর সদস্য মনোনীত হন।

২০০৮-এ ভাষা সৈনিক অধ্যক্ষ আবুল কাশেম সাহিত্য একাডেমী পদক, সাংবাদিকতায় ১৯৯৬ কক্সবাজার ইনিস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরী পদক, ১৯৯৬ এপেক্স ক্লাব সম্মাননা, কক্সবাজার প্রেসক্লাব রজত জয়ন্তীর সৌজন্য পুরস্কার। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য প্রথম আলো সম্মাননা ’০৯, পরিবেশ পুরস্কার কক্সবাজার প্রেস ক্লাব ২০০৬। ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য স্বাধীনতা উৎসব ’০৮ উদযাপন পরিষদ কক্সবাজার সম্মাননা, ২০০৯ সালে কক্সবাজার সাংবাদিক সংসদ (সিএসএস) এর উদ্যোগে কৃতি সাংবাদিক সম্মাননায় ভূষিত হন।

ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর জৈষ্ঠ্যপুত্র মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কক্সবাজারের পরিচালনা সম্পাদক। মেজ পুত্র নজিবুল ইসলাম ও কনিষ্ঠ সন্তান ড. আশরাফুল ইসলাম সজিব বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। বড় কন্যা আশরাফ জাহান কাজল নারীনেত্রী ও কনিষ্ঠ কন্যা ফাতেমা জাহান উজ্জ্বল বাহারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা।
তথ্যসূত্র: কক্সবাজার সাংবাদিক কোষ।

 

লেখক: প্রণেতা- কক্সবাজার সাংবাদিক কোষ
সভাপতি- কক্সবাজার সাংবাদিক সংসদ (সিএসএস)
সংবাদ অনুবাদক (বার্তা সম্পাদক),
আঞ্চলিক বার্তা সংস্থা, বাংলাদেশ বেতার, কক্সবাজার